Skip to content

Roopen Roy

My Blog My Cyberkutir

Menu
  • Chez Roopen
  • My Blogs
  • Prayer
  • Bangla
  • Mrigana
Menu

হে মুগ্ধ জননী

Posted on November 4, 2025 by admin

গুরুদেব বাঙালিকে কূপমণ্ডূক হবার পরামর্শ দেন নি
রূপেন্দ্র নারায়ণ রায়
গুরুদেবের “বঙ্গমাতা” কবিতাটি আমরা সবাই পড়েছি । কবিতার শেষ পংক্তি দুটি আমরা বার বার
ব্যবহার করে থাকি “সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী,
রেখেছ বাঙালী করে, মানুষ কর নি”
বাকি কবিতাটি আমরা স্রেফ ভুলে গেছি ।
এদিকে বঙ্গমাতা ভাগের মা হয়ে গেছেন , সন্তানসন্ততির সংখ্যাও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে ।
পৃথিবীতে বাংলাভাষী মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয় । সব যোগ দিলে দাঁড়ায় ২৭ কোটি । পশ্চিম
বাংলার বাংলা ভাষাভাষী মানুষের দ্বিগুন সংখ্যা বাস করেন বাংলাদেশে !
এছাড়া বাঙালি নেই কোথায় ?
আপনি কি জানেন যে পাকিস্তানে ২০ লাখ বাঙালি আছেন, সৌদি আরবে ১৪ লক্ষ,
সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে ১১ লক্ষ , যুক্তরাজ্যে ৪.৫ লাখ এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে ৩.৭০
লাখ ? বাঙালি ডায়াস্পোরা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে । তাঁরা রবীন্দ্রনাথের গান শোনেন ,
সত্যজিৎ রায়ের ছবি দেখেন , নজরুলের কবিতা পড়েন , পদ্মার ইলিশ ভাপা আর বাগদা চিংড়ির
মালাইকারি রান্না করেন , শান্তিনিকেতন আর শিলাইদহ তাঁদের তীর্থস্থান , তাঁরা প্রবাসে দুর্গা
পুজো করেন , ঈদে দাওয়াত দেন, দীপাবলিতে নিমন্ত্রণ করেন, ছেলেমেয়েদের সুকুমার রায় আর
পরশুরামের বই পড়তে দেন । দূর দেশে থাকলেও মন পরে থাকে বালিগঞ্জ , শ্যামবাজারে ,
ধানমন্ডিতে , গুলশানে, বারিধারায় আর বেলঘড়িয়ায় । বিদেশে সংস্কৃতিটা কেউ তারের বেড়া দিয়ে
ভাগ করে নি ।
অন্নদাশঙ্কর রায় অনেকযুগ আগে ছড়া কেটেছিলেন :
ভুল হয়ে গেছে বিলকুল-
আর সবকিছু ভাগ হয়ে গেছে,
ভাগ হয়নিকো নজরুল।
এই ভুলটুকু বেঁচে থাক,
বাঙালি বলতে একজন আছে-
দুর্গতি তার ঘুচে যাক্।
বাঙালির সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন কি তা বোঝানো সহজ নয় -তবে আমার মনে হয় বাংলাভাষাই
প্রধান সেতুবন্ধন ।
এই ভাষার দুর্বার শক্তি উর্দুকে উৎখাত করে বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছিলো , এই ভাষায়
আমাদের কৃষ্টির বুনিয়াদ ।
একবার জুরিখে গিয়েছিলাম কাজে । সপ্তাহান্তে শহরে থাকার মানে হয় না , পাহাড় হাতছানি দেয় ।
জুরিখ থেকে
ইন্টারলাকেন ট্রেনে মাত্র দু ঘন্টার পথ । মাঝ রাস্তায় একটু কফি খেতে ইচ্ছে হলো ! ট্রলী
নিয়ে একজন বিক্রেতা এলেন ।
যদিও তিনি ইংরেজিতে কথা বললেন -বুঝতে কোনো অসুবিধে হলো না তিনি শ্রীহট্টের মানুষ । আমি
বললাম : আপনার দেশ কি সিলেট ?
একটা অপূর্ব হাসিতে উদ্ভাসিত হলো তাঁর মুখ । আমি বললাম আমি সুর্মা ভ্যালি চা বাগানে গেছি ।
অনেক গল্প হলো, ছেলেটির নাম নাজির চৌধুরী ব্যাপী ! ইন্টারলাকেন আসার আগে হাত জড়িয়ে
ধরে বললেন ” ফেরার পথের আমাদের বাসায় আসতেই হবে ।
আমি পদ্মার ইলিশ রান্না করবো ।”
আমি গিয়েছিলাম । দুজন যুবক একটি ছোট ফ্ল্যাটে থাকেন -বার্ন স্টেশনের কাছেই ! বাপির কাছে
রোমহর্ষক গল্প শুনলাম ।
বিশ হাজার টাকা দিয়ে কাগজপত্র বানিয়েছেন । তার মধ্যে আছে একটি দারোগার ছাপ দেয়া চিঠি –
রাজনৈতিক কারণে তার প্রাণ বিপন্ন , প্রতিপক্ষরা তাকে খুঁজছে । বাংলায় লেখা কিন্তু তার
ইংরেজী তর্জমা নোটারীর ছাপ দেয়া । প্রথমে টুরিস্ট ভিসায় রোম , তারপর ট্রেনে বার্ন ।
সেখানে একটি আইনজীবীর সহায়তায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের “কেস ফাইল”। মামলা চলছে এবং সেই
এসাইলাম আবেদনের মামলার নিষ্পত্তি হওয়া অবধি বাপী একটি মাসোহারা পাবেন এবং সুইস রেলে
ট্রলীতে কফি এবং
নাস্তা ফেরী করার সাময়িক কাজ ।
এতো প্রতিকূলতার মধ্যেও যুবক দুজন সন্ধ্যাটি মাতিয়ে রাখলেন । হাসন রাজা আর শাহ আব্দুল
করিমের গান আর সিলেটের কৃতি সন্তান সৈয়দ মুজতবা আলীর গল্প । নানা রকম খানার
আয়োজন করেছিলেন । একটি পদ দেখিয়ে বললেন -এটি টমি মিয়াঁর রেসিপি । টমি মিয়াঁকে
যুক্তরাজ্যে কারী সম্রাট বলা হয় , ইংল্যান্ডের রানী এবং প্রধান মন্ত্রী টমি মিয়াঁর রান্নার
গুণগ্রাহী । অবশেষে রবীন্দ্র সংগীত । এই দুই অপরিচিত বাংলাদেশী যুবকের আন্তরিকতা এবং
আতিথেয়তায় আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম । আমাদের কাছে নিয়ে এসেছিলো একটি ভাষা যা আমাদের
তিনজনের , একটি সংস্কৃতি যা সব বাঙালির এবং একটি অবিভাজ্য কৃষ্টি যাতে সকলের
অবিভক্ত অংশ আছে ।
জন্ম উত্তর কলকাতায় , বাবা ছিলেন কলকাতা উঁচু আদালতের আইনজীবী । প্রথম জীবনে
নরেন্দ্রনাথ অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মের উদার চিন্তা এবং আদর্শে । ১৮৮০
খ্রিষ্টাব্দে নরেন কেশব সেনের নব বিধান ধর্মীয় আন্দোলনে যোগ দেন । রামকৃষ্ণদেবের
স্নেহচ্ছায়ায় আসেন ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে । তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে নরেনের জীবনে আমূল
রূপান্তর ঘটে । রামকৃষ্ণদেব দেহ রাখেন ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দের অগাস্ট মাসে । ওই বছরের
ডিসেম্বর মাসে খ্রীষ্টের জন্মোৎসবের আগের দিন নরেন্দ্রনাথ সন্ন্যাস গ্রহণ করেন, নাম
নেন স্বামী বিবেকানন্দ ।
স্বামী বিবেকানন্দ বাংলার গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ ছিলেন না । ১৮৮৮ থেকে ১৮৯৩ তিনি
পরিব্রাজক হিসেবে সারা ভারতবর্ষ ভ্রমণ করেন । সঙ্গে শুধু গৈরিক বস্ত্র, একটু কমণ্ডলু এবং
দুটি প্রিয় বই । একটি ভাগবতগীতা কিন্তু অন্যটি জার্মান খ্রিস্টান ধর্মযাজক টোমাস আ
কেমপিসের লেখা : দা ইমিটেশন অফ ক্রাইস্ট ( খ্রিস্টের অনুসরণে ) । পাঁচ বছর স্বামীজী একা
ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ করেছিলেন ।
বিভিন্ন ধর্মের, জাতির , সম্প্রদায়ের এবং ভাষাভাষী সংস্পর্শে তিনি আসেন । আমাদের দেশের
বহুত্ব এবং বৈচিত্র তিনি গভীরভাবে অনুভব এবং আত্মস্থ করেন । ১৮৯৩ মে মাসে বোম্বাই
থেকে জাহাজে প্রথম বিদেশযাত্রা কিন্তু আর সকলের মতো লন্ডনের উদ্দেশ্যে নয় ! তাঁর
যাত্রাপথ ছিল কৌতূহলোদ্দীপক। তিনি চীন, জাপান এবং কানাডা হয়ে রেলগাড়িতে আমেরিকা
যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছলেন । প্রথম বিশ্বধর্ম মহাসভা ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ১১ সেপ্টেম্বর শিকাগোর
আর্ট ইনস্টিটিউটে উদ্বোধন হয়। তিনি ভারত এবং হিন্দু ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করেন। স্বামী
বিবেকানন্দ তাঁর প্রথম সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন : " পৃথিবীর মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন
সন্ন্যাসী-সমাজের পক্ষ থেকে আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। সর্বধর্মের যিনি প্রসূতি-
স্বরূপ,তাঁর নামে আমি আপনাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। সকল জাতি ও সম্প্রদায়ের অন্তর্গত
কোটি কোটি হিন্দু নরনারীর তরফে আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।" বাকি সব তো ইতিহাস !
স্বামীজী বিশ্ববিখ্যাত হয়েছিলেন এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মিশন সারা পৃথিবীতে মানবসেবায়
নিয়োজিত আছে !
এবার অন্য এক নরেনের কথায় আসা যাক । নাম নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য – জন্ম উত্তর চব্বিশ
পরগনার একটি গ্রামে । ঘোর শাক্ত পুরোহিত পরিবারে জন্ম । তিন জন নরেনকে অনুপ্রাণিত
করেছিলেন : স্বামী বিবেকানন্দ , বঙ্কিমচন্দ্র এবং বীর সাভারকার । ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধে
অস্ত্র সংগ্রহ করতে জার্মানি যেতে চেয়েছিলেন । কিন্তু প্রথমে গেলেন ইন্দোনেশিয়া , তারপর
চীন এবং জাপান । অবশেষে একটি জার্মান জাহাজে
পৌঁছলেন সান ফ্রান্সিস্কো । ছদ্মনাম নিলেন মানবেন্দ্র নাথ রায় । তারপর নিউ ইয়র্ক , সেখানে
মার্ক্সবাদে হাতেখড়ি এবং তারপর ১৯১৭ সালে মেক্সিকো যাত্রা । সেখানে আলাপ হলো রুশ
কমিউনিস্ট নেতা মিখায়েল বোরোদিনের সঙ্গে । বোরোদিনের আমন্ত্রণে তিনি গেলেন মস্কো ।
কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক সংস্থার দ্বিতীয় বিশ্বসম্মেলন পেলেন আমন্ত্রণ । তখন বলশেভিকরা
ক্ষমতায় এবং
লেনিন তাঁদের অবিসংবাদিত নেতা ।
তিনি লেনিনের স্নেহের পাত্র হয়ে উঠলেন । তিনি লেনিন এবং স্তালিনের সঙ্গে তর্ক বিতর্ক
করেছেন এবং অনেক তাত্ত্বিক বিষয়ে লিখেছেন ।
উত্তর চব্বিশ পরগনার একটি প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে লেনিন কিংবা স্তালিনের মতো বাঘা
বিপ্লবী রাষ্ট্র নায়কদের সঙ্গে সমানে সমকক্ষের মতো আট বছর কাজ করেছেন -ভাবা যায় ?
রবীন্দ্রনাথ নিজেও সারা পৃথিবী ঘুরেছেন । চিন্তায় এবং মননে তিনি আন্তর্জাতিক ছিলেন !
কোনো নরেনেরই ফরেন যাওয়া নিয়ে তাঁর কোনো আপত্তি ছিল না । বঙ্গসন্তান যদি
কর্মসংস্থানের সন্ধানে বেঙ্গালুরু বা বস্টন , সিয়াটল কিংবা সুরাত , লন্ডন অথবা লস
আঞ্জেলেস যায় তাতে গুরুদেবের ছিল পূর্ণ উৎসাহ । বরং কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার
ছিলেন :
তাই তিনি লিখেছিলেন
” দেশদেশান্তর-মাঝে যার যেথা স্থান, খুঁজিয়া লইতে দাও করিয়া সন্ধান।”
শুধু দেশান্তরি হলেই চলবে না, তাদের দুঃসাহসিক যাত্রায় দিয়েছিলেন ইন্ধন :
“প্রাণ দিয়ে, দুঃখ স’য়ে, আপনার হাতে
সংগ্রাম করিতে দাও ভালোমন্দ-সাথে।
শীর্ণ শান্ত সাধু তব পুত্রদের ধরে
দাও সবে গৃহছাড়া লক্ষ্মীছাড়া ক’রে।”
তিনি দিব্যদৃষ্টিতে দেখেছিলেন বাঙালি ডায়াস্পোরা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে যাচ্ছে এবং সেই অভিবাসী
বাঙালিদের জন্যে ছিল তাঁর আশীর্বাদ ।
বাঙালি এখন পৃথিবীর সমস্ত প্রান্তে : কলকাতা থেকে চট্টগ্রাম , ঢাকা থেকে দিল্লি , মেলবোর্ন
থেকে শিকাগো , জুরিখ থেকে জোহানেসবার্গ ।
তারা বাংলায় কথা বলে (কিংবা বলে না ) । তাদের মননে রবীন্দ্রনাথ , তাদের গানে অতুলপ্রসাদ,
নজরুল, রজনীকান্ত । তারা সত্যজিৎ, ঋত্বিক , ঋতুপর্ণর চলচ্চিত্র দেখে , তারা বাংলার বর্ষার
কথা ভাবে, বাংলার রান্না খায় । যত অদৃশ্যই হোক, এক সূত্রে বাঁধা থাকে বাঙালির প্রাণ মন
হৃদয় -কোনো সংকীর্ণ জাত্যাভিমান ভিত্তি করে নয় -বিশ্বের একজন নাগরিক হিসেবে যে নিজেকে
বাঙালি বলে গর্ব অনুভব করে ।

Published in Anandabazar Patrika

Category: Bangla

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recent Posts

  • Prasantada’s Political Economy
  • Prasantada Challenges
  • Again Prasantada
  • Introducing Prasantada
  • পশ্চিম বাংলায় পরিবর্তন নয় রূপান্তর চাই

Recent Comments

  1. Sidhartha Ghosh on For the rain is falling

Archives

  • November 2025
  • October 2025
  • September 2025
  • July 2016
  • March 2015
  • October 2014
  • January 2014
  • July 2013
  • January 2012
  • November 2011
  • April 2011
  • December 2010
  • December 2008
  • December 2004

Categories

  • Bangla
  • Business
  • Uncategorized
© 2025 Roopen Roy | Powered by Minimalist Blog WordPress Theme